হাওজা নিউজ এজেন্সি: তিনি বৃহস্পতিবার আল-মায়াদিন চ্যানেলে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, “এই সপ্তাহে বিশ্ব একের পর এক ভয়াবহ অপরাধ দেখেছে, যা সন্ত্রাসী ইহুদিবাদীরা প্রকাশ্যে সংঘটিত করেছে। এই প্রজন্ম মানবতার চরম অবক্ষয় ও আন্তর্জাতিক সমাজের লজ্জাজনক নীরবতার সাক্ষ্য হয়ে থাকবে।”
তিনি বলেন, “ইসরায়েল গর্ভবতী নারী ও অনাগত শিশুদেরও হত্যা করেছে, যখন তারা অনাহারে ছিল। এমন বিশ্ব কীভাবে সভ্যতার দাবি করে, যেখানে লক্ষ লক্ষ শিশু এক টুকরো রুটি কিংবা এক ফোঁটা দুধের জন্য কাঁদছে?”
আনসারুল্লাহ নেতা আরও বলেন, “দখলদার ইসরায়েল জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির মাধ্যমে এমন পরিবেশ তৈরি করছে, যেখানে খাদ্য, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার কোনো ব্যবস্থাই নেই। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ইসরায়েল ‘অনাহার’ এবং ‘মৃত্যুর ফাঁদ’কে পরিকল্পিতভাবে গণহত্যার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।”
তিনি পশ্চিমা বিশ্বের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “পশ্চিম কখনোই গণহত্যার যন্ত্র প্রয়োগে পিছপা হয়নি। বরং তারা ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞকে সমর্থন ও সহযোগিতা করছে। যুক্তরাষ্ট্র, যারা নিজেদের মানবাধিকার রক্ষার অগ্রদূত দাবি করে, তারাই আজ ইহুদিবাদী দখলদারদের গণহত্যায় সরাসরি অংশীদার।”
আল-হুথি বলেন, “গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইসরায়েলের লাগাতার বোমাবর্ষণ মানুষকে অতি সংকুচিত স্থানে ঠেলে দিয়েছে, যার ফলে ভয়াবহ মানবিক ও স্বাস্থ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ইসরায়েল ‘নয়টি আমিরাত’ নামে এক বিশ্বাসঘাতক প্রকল্প বাস্তবায়নে মরিয়া, যাতে কিছু ফিলিস্তিনি ভাড়াটে গদ্দারকে ব্যবহার করে ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়—কিন্তু আল্লাহর সাহায্যে এই ষড়যন্ত্রও ব্যর্থ হবে।”
তিনি বলেন, “গাজায় মুজাহিদদের প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম কেবল প্রতিরক্ষা নয়, বরং তা ইসরায়েলি সামরিক কৌশলগুলো সম্পূর্ণ ব্যর্থ করে দিচ্ছে। বিগত ২১ মাসে আমেরিকার সর্বোচ্চ সমর্থন সত্ত্বেও ইসরায়েল তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। দখলদারদের মধ্যে গভীর দুর্বলতা ও চরম হতাশা বিরাজ করছে—তারা মুসলিম বিশ্বের নীরবতাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।”
আনসারুল্লাহ নেতা বলেন, “ইসরায়েলের এই পরাজয় তাদের মনস্তাত্ত্বিক দুর্বলতার প্রকাশ এবং একইসঙ্গে মুসলিম বিশ্বের নীরবতার লজ্জাজনক চিত্র। ইসরায়েল এখন লেবাননের সঙ্গে পূর্বের চুক্তিসমূহ লঙ্ঘন করছে এবং মার্কিন উৎসাহে প্রতিরোধ শক্তিকে দুর্বল করতে চায়। লেবাননের উচিত স্পষ্টভাবে সব ধরনের মার্কিন ও ইসরায়েলি চাপ ও দিকনির্দেশনার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করা।”
তিনি বলেন, “এই সপ্তাহে আমাদের পক্ষ থেকে ৪৫টি সামরিক অভিযান পরিচালিত হয়েছে—যার মধ্যে ছিল সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, ব্যালিস্টিক মিসাইল, ড্রোন ও সামরিক নৌকা ব্যবহার। লোহিত সাগর, অ্যাডেন উপসাগর ও আরব সাগরে ইসরায়েলি জাহাজ চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রয়েছে। উম্মুর রাশরাশ (ইলাত) বন্দর পুনরায় চালু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এটি বিশ্বব্যাপী শিপিং কোম্পানিগুলোর জন্য একটি সুস্পষ্ট বার্তা—যারা দখলদারদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও জানান, “ইসরায়েলি হামলা হুদাইদাহ বন্দরেও চালানো হয়েছে, যা ইয়েমেনের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে করা হয়েছে। তবে ইয়েমেনের বিমান প্রতিরক্ষা ও ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনী এসব আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। ইসরায়েল ও তার পশ্চিমা মিত্রদের সমর্থন কখনোই আমাদের গাজার প্রতিরোধে সমর্থনের দৃঢ় অবস্থান থেকে সরাতে পারবে না।”
আপনার কমেন্ট